![]() |
আল্লাহ তাআলার নির্ধারণ করা প্রকৃতির নিয়মেই চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ ঘটে। দুনিয়ার কারো জন্ম-মৃত্যু বা বিশেষ কোনো ঘটনার কারণে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না। এ বিষয়ে ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, যা প্রাকৃতিক কারণের বাইরে গিয়ে একে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে দেখতে শেখায়।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ
জাহেলি যুগে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। মানুষ মনে করত, কোনো বড় ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যুর কারণে এমনটা ঘটে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ছেলে ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনে সূর্যগ্রহণ হলে সাহাবিরা যখন এমন ধারণা করছিলেন, তখন তিনি তাদের এই ভুল ধারণা ভেঙে দেন।
তিনি বলেন, “সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না।” (বুখারি ও মুসলিম)
কোরআনে আল্লাহ তাআলা এই ঘটনার বিশেষ তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন:
فَإِذَا بَرِقَ الْبَصَرُ - وَخَسَفَ الْقَمَرُ - وَجُمِعَ الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ
‘যখন দৃষ্টি চমকে যাবে। চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে। এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে।’ (সুরা কিয়ামাহ : আয়াত ৭-৯)
এই আয়াতগুলোতে চন্দ্রের জ্যোতিহীন হয়ে যাওয়াকে কেয়ামতের একটি আলামত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা আল্লাহর অসীম ক্ষমতাকেই নির্দেশ করে।
চন্দ্রগ্রহণের সময় মুসলিমদের করণীয়
রাসুল (সা.) চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় কিছু আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آياتِ اللهِ، لاَ يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذلِكَ فَادْعُوا اللهَ وَكَبِّرُوا وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا
‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে আর নামাজ আদায় করবে এবং সাদকা প্রদান করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে একই নির্দেশনা পাওয়া যায়:
إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ مِنْ آيَاتِ اللهِ، وَإِنَّهُمَا لَا يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ، وَلَا لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا فَكَبِّرُوا، وَادْعُوا اللهَ وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا،
‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদর (ক্ষমতার) বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না। অতঃপর যখন তোমরা চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ দেখতে পাও, তখন তাকবির (اَللهُ اَكْبَر) বলো আল্লাহর কাছে দোয়া করো নামাজ আদায় কর এবং দান-সদকা করো।’ (মুসলিম)
গ্রহণকালীন নামাজ
হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী, চন্দ্রগ্রহণের সময় সালাতুল কুসুফ (গ্রহণকালীন নামাজ) আদায় করা সুন্নত। এই নামাজ একা বা জামাতের সাথেও পড়া যায়, তবে হানাফি মাজহাবের অনুসারীদের মতে এটি নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়া উত্তম।
ফিকহের বিখ্যাত গ্রন্থ বাদায়েউস সানাঈ-তে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে:
ﺃَﻣَّﺎ ﻓِﻲ ﺧُﺴُﻮﻑِ ﺍﻟْﻘَﻤَﺮِ ﻓَﻴُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻓِﻲ ﻣَﻨَﺎﺯِﻟِﻬِﻢْ؛ ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﺍ ﻭُﺣْﺪَﺍﻧًﺎ
‘চন্দ্রগ্রহণের সময় ঘরে নামাজ আদায় করা হবে। কেননা সুন্নাহ হচ্ছে, তখন একাকি নামাজ পড়া।’ (বাদায়েউস সানাঈ : ১/২৮২)
সুতরাং, এই সময়ে অযথা গল্প বা হাসি-তামাশায় সময় নষ্ট না করে আল্লাহর প্রতি ভয় রেখে দোয়া, ইস্তেগফার, নামাজ এবং সাদকার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা উচিত।